Dawatul Islam | ফজলুর রহমানের বক্তব্য: ইসলাম ও আলেম সমাজকে অপমান করার চক্রান্ত

রবিবার, ১২, অক্টোবর, ২০২৫ , ২৬ আশ্বিন ১৪৩২

আপনার দাওয়াহের বার্তাকে পৌঁছে দিন বিশ্বময়
একটি প্রফেশনাল ও আধুনিক ইসলামী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
ইসলামী শিক্ষার সাথে থাকুন
ইসলামিক বক্তা, খতিব, শিক্ষক...গণের জন্য ওয়েবসাইট
এখানে ক্লিক করুন
সমাজসেবা কার্যক্রমে অংশ নিন
আপনার কষ্টার্জিত বয়ান আজীবন ধরে রাখুন
আরও জানুন
ফজলুর রহমানের বক্তব্য: ইসলাম ও আলেম সমাজকে অপমান করার চক্রান্ত
১৯ মে ২০২৫ ১১:২২ মিনিট

ভূমিকা

সম্প্রতি বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের একটি টেলিভিশন টকশোতে প্রদত্ত মন্তব্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইসলামের নামে কটুক্তি, আলেম সমাজকে অবমাননা এবং তৌহিদি জনতার বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষার প্রয়োগ—এসব কিছুই শুধু একজন ব্যক্তির সীমালঙ্ঘন নয়, বরং একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এ প্রবন্ধে আমরা উক্ত বক্তব্যের প্রকৃতি, প্রতিক্রিয়া, এর ইসলামী মূল্যায়ন এবং সমাজের দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করবো।


১. বক্তব্যের বিশ্লেষণ: কী বলেছিলেন ফজলুর রহমান?

ফজলুর রহমান অভিযোগ করেছেন, দেশের আলেম সমাজ “জঙ্গিবাদ ছড়ায়”, “প্রগতিশীলতার শত্রু” এবং “মেয়েদের অগ্রযাত্রার পথে বাধা।” তিনি টিভি আলোচনায় এমন ভাষায় আলেমদের চরিত্রচিত্রণ করেছেন, যা কোনো মুসলমানের মুখে মানায় না। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ছিল তাঁর বক্তব্যে “মাদ্রাসা-শিক্ষা অন্ধত্ব তৈরি করে” এমন ধৃষ্টতা।


২. আলেম ও তৌহিদি জনতার প্রতিক্রিয়া

হেফাজতে ইসলাম, বিভিন্ন আলেম সংগঠন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং সাধারণ মুসলমানেরা এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ, কুশপুত্তলিকা দাহ এবং প্রতিবাদ সভা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোটি মানুষ এই বক্তব্যকে ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়কে আঘাত করার অপপ্রয়াস বলে আখ্যায়িত করেছেন।


৩. ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এই বক্তব্যের মূল্যায়ন

ক. আলেমদের মর্যাদা

قالاللهتعالى: "يَرْفَعِاللَّهُالَّذِينَآمَنُوامِنكُمْوَالَّذِينَأُوتُواالْعِلْمَدَرَجَاتٍ" (المجادلة: 11)

আল্লাহ তাআলা বলেন, "যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহু ধাপে উন্নীত করেন।"

ফজলুর রহমানের বক্তব্য এই কোরআনি মর্যাদার সরাসরি অপমান। আলেমদের অবজ্ঞা করা মানে ইসলামী শিক্ষাকেই অবজ্ঞা করা।

খ. কটুক্তির শাস্তি

قالرسولالله: "منعادىليولياًفقدآذنتهبالحرب" (صحيحالبخاري)

রাসূল (সা.) বলেন, “যে আমার কোনো ওলিকে শত্রু মনে করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি।”

এই হাদীসের আলোকে স্পষ্ট—আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের, যারা দ্বীন প্রচারে আত্মনিয়োগ করেছেন, তাদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করলে তার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।


৪. রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র না কুসংস্কার?

ফজলুর রহমানের এই মন্তব্য কি কেবল অজ্ঞতা ও অহংকারের বহিঃপ্রকাশ, নাকি এটি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চক্রান্ত? আজকের এই 'উন্নয়নের নামে ধর্মকে অগ্রাহ্য' করার প্রবণতা এক শ্রেণির রাজনীতিবিদের মধ্যে লক্ষণীয়। ইসলামকে সরিয়ে দিয়ে এক নতুন “ইসলামবিহীন প্রগতিশীলতা” তৈরির প্রচেষ্টা চলছে।


৫. আমাদের করণীয়

ক. সচেতনতা সৃষ্টি

সাধারণ মুসলমানদের উচিত ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। সামাজিক মাধ্যমে যুক্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো, বয়ান ও আলোচনার মাধ্যমে সত্য তুলে ধরা জরুরি।

খ. রাজনৈতিকভাবে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা

যে ব্যক্তি বা দল ইসলাম ও আলেম সমাজকে অবমাননা করবে, তাদের রাজনৈতিকভাবে বর্জন করা ঈমানী দায়িত্ব। ইসলামকে অবমাননা করে কেউ নেতৃত্বে আসতে পারে না।

গ. মিডিয়া জবাবদিহিতা

সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে—তারা যেন ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য প্রচার করে ইসলামী অনুভূতিকে আঘাত না করে। ইসলামিক মিডিয়াগুলোকে এই বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।


উপসংহার

ফজলুর রহমানের বক্তব্য কেবল একটি অপরিণত মন্তব্য নয়—এটি একটি মূল্যবোধের অবক্ষয়, ঈমানহীন রাজনৈতিক মতলবের বহিঃপ্রকাশ। মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসকে অপমান করে কেউ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারে না। ইসলাম এই দেশের মাটি ও মানুষের আত্মা, আর আলেম সমাজ সেই আত্মার ধারক। তাদের সম্মান রক্ষা করা মানে ইসলামের সম্মান রক্ষা করা। আজই আমাদের জেগে উঠতে হবে—ভ্রান্তির বিরুদ্ধে, অপবাদের বিরুদ্ধে, এবং ইসলাম ও উম্মাহর মর্যাদা রক্ষায়।

 

সব সংবাদ